Custom Search
Showing posts with label Talk of the Town. Show all posts
Showing posts with label Talk of the Town. Show all posts

Wednesday, October 06, 2010

Sakib Al Hassan, The great!

0 Comments
অসাধারণ জয় অনন্য সাকিব
বাংলাদেশ : ২২৮/১০ (৪৯.৩ ওভার), নিউজিল্যান্ড : ২০০/৮ (৩৭ ওভার), ফল : বাংলাদেশ ৯ রানে জয়ী

সাইদুজ্জামান
তামিম ইকবাল নেই। মাশরাফি বিন মর্তুজাও নিজের দ্বিতীয় ওভার না করেই গোড়ালি মচকে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ফিরে গেলেন ড্রেসিং রুমে। তবে সাকিব আল হাসান আছেন। বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড সিরিজের প্রথম ম্যাচের চিত্রনাট্যটা যিনি নিজের মনের মতো করে লিখে এনে সফল মঞ্চায়নও করলেন! যে চিত্রনাট্যে তিনি প্রধান চরিত্র; এমনকি পার্শ্বচরিত্রও। ব্যাটিং-বোলিং দিয়ে একেকজন ক্রিকেট মাঠের প্রধান চরিত্র হয়ে ওঠেন। ৫৮ রান আর ৪ উইকেটের পর কাল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের দ্বিতীয় জয়ে অধিনায়কের পার্শ্বচরিত্রেও দুর্দান্ত সাকিবকে দেখেছে মিরপুর স্টেডিয়ামের দর্শকরা। এরপর এটাকে 'সাকিবের ম্যাচ' বলতে কি আর কিছু লাগে?
ড্যানিয়েল ভেট্টরি ও সাকিব আল হাসানের দ্বৈরথ আলোচনায় আছে নিউজিল্যান্ড ঢাকায় পা রাখার পর থেকেই। গতকাল এ লড়াইয়ে আরেকজন প্রতিপক্ষ পেয়ে যান সাকিব। ১১ ইনিংসে ব্রেন্ডন ম্যাককালামকে মাত্র একটি ফিফটি করতে দেখলেও তাঁকেই 'শত্রু ভয়ংকর' মনে করছিল বাংলাদেশ। ১৫ ওভার শেষের হঠাৎ বৃষ্টি এবং সেই বৃষ্টির কারণে টার্গেট দুম করে বেড়ে যাওয়ার পরও নিউজিল্যান্ডকে জয়ের চওড়া রাস্তায় রেখেছিলেন ম্যাককালাম। বাংলাদেশের
করা ২২৮ রান তো বটেই, ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে কঠিন হয়ে যাওয়া জয়ের লক্ষ্যও (৩৭ ওভারে ২১০ রান) হেঁটে যাওয়া দূরত্বের মনে হচ্ছিল কিউই এ ওপেনারের ৩৬ বলের ফিফটি করা দেখে। তবে অন্য কিছু ছিল সাকিবের মনে। দ্বিতীয় স্পেলে এসে ম্যাককালামকে ক্রিজের বাইরে টেনে এনে ধোঁকা দেন তিনি। এর দুই বল পর গ্র্যান্ট এলিয়টকে তুলে নিয়ে ঝাঁ করে ম্যাচের ফোকাসটা বাংলাদেশের ওপর টেনে আনেন সাকিব। এরপর আকাশে মেঘের ওড়াউড়ি, বৃষ্টি আইনের জটিল হিসাবনিকাশে সম্ভাবনার দোলাচলে মাথা উঁচু করেই ছিল বাংলাদেশ।
এ দোলাচলের সময় কি জ্যাকব ওরামকে স্মরণ করেছিলেন ভেট্টরি? করতেও পারেন। দেশে রেখে আসা ওই অলরাউন্ডারের ব্যাটেই বারকয়েক জয়ের পথ থেকে ছিটকে পড়েছিল বাংলাদেশ। ওরাম নেই, তবে কাল ভেট্টরি পাশে পেয়ে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের বিপক্ষে দারুণ সফল ব্যাটসম্যান রস টেলরকে। ডাকওয়ার্থ-লুইস সাহেব দ্বয়ের নিয়মে বেঁধে দেওয়া রানের চেয়ে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও এ দুজনের হিসাবি ব্যাটিংয়ে নিউজিল্যান্ডকে খরচের খাতায় ফেলে দেওয়া যাচ্ছিল না। সে জুটি ভাঙতে কিনা দুই ওভারের প্রথম স্পেলে ১৭ রান দেওয়া নাঈম ইসলামকে ডেকে আনলেন সাকিব! বিস্ময়ে কপালে উঠে যাওয়া ভ্রু নামার আগেই ভেট্টরিকে ফিরিয়ে দেন এ অফ স্পিনার। একই স্পেলের চতুর্থ ওভারে রস টেলরকে আউট করেন নাঈম। পাঁচ ওভারের শেষ স্পেলে মাত্র ১৩ রানে ২ উইকেট পাওয়ার জন্য সাকিবকে ধন্যবাদ দিতেই পারেন তিনি!
নাঈমের পাশে আবদুর রাজ্জাকও উতরে গেছেন রান কম দেওয়ার পরীক্ষায়। স্লো উইকেটে স্পিনের সামনে কিউইদের অস্বস্তিতে পড়াটা অনুমিতই ছিল। তবু শেষ দুই ওভারে জয়ের জন্য দরকার ২১ রান। ব্রেন্ডন ম্যাককালামের অগ্রজ নাথান ততক্ষণে হাত খুলে মারতে শুরু করেছেন। তবে কি তীরে এসে আরেকবার তরি ডুববে বাংলাদেশের? এমন আশঙ্কা থেকেই নিজের একটি ওভার তুলে রেখেছিলেন সাকিব। যে ওভারটিতে নাথান ম্যাককালামকে নিজের চতুর্থ শিকার বানানোর পাশাপাশি মাত্র ৩ রান দেন তিনি। তাই জেতার জন্য শেষ ওভারে নিউজিল্যান্ডের দরকার পড়ে ১৮ রান। কাইল মিলসকেই যা একটু ভয়। ১০ নম্বরে ক্রিজে আসা টিম সাউদি কতটাই বা করবেন। তবে স্ট্রাইকে মিলস। কিন্তু নাজমুলের প্রথম তিনটি নিখুঁত স্লোয়ারে বলে ব্যাটই লাগাতে পারেননি তিনি। চতুর্থ বলে ৩ রান ওঠায় কার্যত তখনই ম্যাচ জিতে যায় বাংলাদেশ। তাই শেষ বলে সাউদির জোরালো ওই শটে হাত না বাড়ালেও পারতেন নাজমুল। কিন্তু বাড়ালেন এবং ডান হাতে সেলাই নিয়ে অন্তত এক সপ্তাহের জন্য মাঠের বাইরে চলে গেলেন তিনি! ড্রেসিং রুমে অনিশ্চয়তার অন্ধকারে বসে থাকা মাশরাফির সঙ্গে নাজমুলের যোগ দেওয়ার তাজা দৃশ্যের মধ্যে জয়োৎসবটা জমিয়ে করে কিভাবে বাংলাদেশ? মাশরাফির জন্মদিনের উৎসবটাও সে রকম রঙিন হলো কই?
২০০৮ সালের 'হোম সিরিজ'ও জয় দিয়ে শুরু করেছিল বাংলাদেশ। তামিম থাকলে সে ম্যাচের সুখস্মৃতি নিয়ে বিস্তর টানাটানি হতো। কিন্তু বাঁহাতি এ বিস্ফোরক ওপেনারের অভাব কতটা পুষিয়ে দেবেন ইমরুল কায়েস ও শাহরিয়ার নাফীস, তা নিয়ে মৃদু সংশয় ছিল। সে সংশয় একেবারে মিথ্যা হয়নি। তবে ধীরে হলেও বাংলাদেশের ইনিংসটা পথ হারাতে দেননি ইমরুল ও শাহরিয়ার। ফেব্রুয়ারিতে নিউজিল্যান্ডে সেঞ্চুরি করে আসা ইমরুল বিশেষ সুবিধা করতে না পারলেও আড়াই বছর পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরা শাহরিয়ার তাঁর ৩৫ রানের ইনিংসে কিছুটা আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছেন ঠিকই। পরের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সাকিব ছাড়া আর কেউ বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। তাই বলে দলকে অথৈ সাগরে ভাসিয়েও দিয়ে যাননি। অবশ্য মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ কিংবা নাঈম ইসলামরা তাঁদের ব্যাটিং সামর্থ্য মেলে ধরতে পারলে বাংলাদেশের ইনিংস আরেকটু দীর্ঘ হতো। যে ইনিংসের নিয়ন্ত্রক সেই সাকিব। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আগের ১০ ম্যাচে যাঁর একটিও ফিফটি নেই। গড় ১২! কাল সেই সাকিব মিলসকে তুলে মারতে গিয়ে বোল্ড হওয়ার আগে করেছেন ৫১ বলে ৫৮ রান। আট বাউন্ডারির তিনটি সাউদির এক ওভারেই মেরেছেন তিনি। যা দেখে জেমি সিডন্সের কপালে জমে থাকা ভাঁজগুলো মিলিয়ে যাওয়ারই কথা। এক দিনের ক্রিকেটে রান নেই; উস্টারে সাকিবের আলো ঝলমলে দিনগুলোও তাই চিন্তিত করে তুলেছিল বাংলাদেশ কোচকে।
সে দুশ্চিন্তা কেটে গেছে। তামিম, আশরাফুল আর মাশরাফিকে ছাড়াও ম্যাচ জেতে বাংলাদেশ। মাশরাফির জন্মদিনে জয়ের চেয়ে এটাই বুঝি বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি!